অ্যালার্জির কারণ, লক্ষন ও চিকিৎসা
অ্যালার্জির সাথে সবাই পরিচিত। কারো এই ঘটনা কম হলেও কেউ কেউ প্রায়ই অ্যালার্জিজনিত সমস্যায় ভোগেন। আমাদের অনেকেই অ্যালার্জির কারণ, এর লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানিনা যখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কোন বাহ্যিক উপাদানের সাথে বিক্রিয়া করে তখন এলার্জি দেখা দেয়। ফুলের পরাগরেণু, মৌমাছির হুল অথবা পোষা প্রাণীর লোম, এমনকি কিছু খাবার যেমন চিংড়ি, গরুর মাংস, বেগুন ইত্যাদি ছাড়াও আরও অনেক কিছু অ্যালার্জির কারণ হিসেবে বিবেচিত।
আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করার জন্য অ্যান্টিবডি উৎপন্ন করে। যখন এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমুনই সিস্টেম কোন বিশেষ পদার্থ বা অ্যালার্জেনকে ক্ষতিকর ভেবে অ্যান্টিবডি উৎপন্ন করে যা মূলত ক্ষতিকর নয়, তখন সেটি বিক্রিয়া করে অ্যালার্জি সৃষ্টি করে। অ্যালার্জেন হল ওইসব পদার্থসমূহ যা আমাদের দেহে অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে সক্ষম। যখন আমরা এই পদার্থগুলোর সংস্পর্শে আসি তখন ইমিউন সিস্টেমের প্রতিক্রিয়ায় ত্বক, সাইনাস, শ্বাসনালী বা পরিপাক তন্ত্রে প্রদাহ বা চুলকানি তৈরি করতে পারে।
এর তীব্রতা মানুষভেদে বিভিন্নরকম হয়। এতে সামান্য চুলকানি থেকে শুরু করে অ্যানাফিল্যাক্সিস নামক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে যা প্রাণঘাতী জরুরী অবস্থা। যদিও অধিকাংশক্ষেত্রে অ্যালার্জি পুরোপুরি নিরাময় করা যায় না, তবে সাধারণ চিকিত্সা গ্রহনেই অ্যালার্জির উপসর্গগুলো দূর করা যায়।
অ্যালার্জির লক্ষ্ণণ
লক্ষণ ও উপসর্গ অ্যালার্জির কারনের উপর নির্ভর করে। অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হালকা থেকে তীব্র হতে পারে। কিছু গুরুতর ক্ষেত্রে অ্যালার্জি অ্যানাফিল্যাক্সিস নামে পরিচিত, যা এমনকি প্রাণঘাতী।
অ্যালার্জি হলে যেসকল সাধারণ লক্ষন দেখা যায় তাদের মধ্যে–
- হাঁচি দেওয়া
- নাক, চোখ বা মুখে বা ত্বকে চুলকানি
- নাকের গহ্বর ফুলে বন্ধ হয়ে যাওয়া
- চোখ থেকে পানি পড়া
- লাল বা ফোলা চোখ (কনজাংটিভাইটিস)
খাদ্যজনিত অ্যালার্জির কারনে হতে পারে-
- মুখে গোটা সহ চুলকানি
- ঠোঁট, জিহ্বা, মুখ বা গলা ফুলে যাওয়া
- অ্যানাফিল্যাক্সিস
পোকামাকড়ের হুল বা কামড় থেকে অ্যালার্জি হলে-
- কামড়ের স্থানে ফোলা
- সারা শরীরে চুলকানি
- কাশি, বুকে চাপ অনুভব, শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা
- অ্যানাফিল্যাক্সিস
ওষুধের বিক্রিয়ায় অ্যালার্জি হলে-
- চুলকানিযুক্ত ত্বক
- ফুসকুড়ি
- মুখ ফোলা
- শ্বাস প্রশ্বাসে শব্দ হওয়া
- অ্যানাফিল্যাক্সিস
কিছু ধরনের অ্যালার্জি আছে যা খাদ্য, পোকামাকড়ের হুল বা কামড় থেকে হয় যা অ্যানাফিল্যাক্সিস নামে পরিচিত। এটি শরীরে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে বিধায় তা বার বার বলা হচ্ছে।
অ্যানাফিল্যাক্সিসের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে-
- জ্ঞান হারানো
- শ্বাস-প্রশ্বাসের তীব্র সমস্যা
- ত্বকের ফুসকুড়ি
- মাথা হালকা অনুভব করা
- পালস বেড়ে যাওয়া
- বমি হওয়া
কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন?
অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া তীব্র না হলে কয়েক ঘণ্টা পর তা এমনিতেই চলে যায়। এরপরও কিছু সাধারণ ওষুধ আছে যা অ্যালার্জিজনিত উপসর্গের চিকিৎসায় খুব কাজে দেয়। যদি ওষুধ গ্রহন করার পরও দেখা যায় লক্ষণগুলো কমছেনা তখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
যদি অতীতে ঘটে যাওয়া মারাত্মক এলার্জি অ্যাটাক বা অ্যানাফিল্যাক্সিসের কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় তাহলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যান। অ্যানাফিল্যাক্সিস হলে তার দীর্ঘমেয়াদী এবং জটিল চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে একজন ইমিউনোলজি বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন।
চিকিৎসা
অ্যালার্জিজনিত সমস্যায় নিম্নলিখিত চিকিৎসাসমুহ গ্রহন করা যেতে পারেঃ
- অ্যান্টিহিস্টামিন গ্রহন অ্যালার্জির বহুল প্রচলিত চিকিৎসা
- শ্বাসের সমস্যায় নাসাল স্প্রে
- ইম্যুনোথেরাপি
- এপিনেফ্রিন ইনজেকশন
অ্যালার্জি প্রতিরোধে অ্যালার্জেন পদার্থসমুহ থেকে এড়িয়ে চলা বেশ কার্যকর।