প্রাপ্তবয়স্কদের মনোযোগে ঘাটতি ও অস্থিরতাজনিত সমস্যা

আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম, পড়াশোনা বা অফিসের দায়িত্ব সামলাতে যথেষ্ট খেয়াল নিয়ে চলতে হয়। বাচ্চারা স্বভাবতই একটু বেখেয়ালি হয়ে থাকে। কিন্তু অনেকসময় দেখা যায় আমাদের প্রাপ্তবয়স্কদেরও অনেকেই পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে অমনোযোগী এবং অস্থির স্বভাবের। প্রাপ্তবয়স্কদের মনোযোগের ঘাটতি ও অস্থিরতাজনিত সমস্যা একটি মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাধি।চিকিৎসাবিজ্ঞানে এর নাম Attention Deficit Hyperactivity Disorder(ADHD)। এই রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে কোন কাজে ঠিকভাবে মনোনিবেশ করতে অসুবিধা হয়, এবং আচরণে সবসময় একটা অস্থির ভাব বজায় থাকে। এদের আবেগপ্রবণতা বেশি থাকে। প্রাপ্তবয়স্কদের মনোযোগে ঘাটতি ও অস্থিরতাজনিত সমস্যা কর্মক্ষেত্রে এবং ব্যাক্তি জীবনে নানা দুর্ভোগ ডেকে আনে।

এর উপসর্গগুলি শৈশবের প্রথম দিকে শুরু হলেও প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগ পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ পায়না। তাই একে প্রাপ্তবয়স্কদের রোগ বলেই বিবেচনা করা হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের বেলায় লক্ষণগুলি শিশুদের সাথে নাও মিলতে পারে।  বয়স বাড়ার সাথে সাথে অস্থিরতা কমে যেতে পারে, তবে আবেগপ্রবণতা এবং মনোযোগ দিতে অসুবিধার সমস্যা চলতেই থাকে।

লক্ষ্ণণ

ADHD আক্রান্ত কিছু মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে এর উপসর্গগুলো কমে যায়, তবে কিছু সমস্যা থেকেই যায় যা সরাসরি দৈনন্দিন কার্যকারিতায় হস্তক্ষেপ করে।

প্রাপ্তবয়স্কদের মনোযোগে ঘাটতি ও অস্থিরতাজনিত সমস্যা দ্বারা আক্রান্ত অনেক প্রাপ্তবয়স্করা জানেই না যে তাদের এরকম সমস্যা রয়েছে। তারা কেবল জানে দৈনন্দিন সাধারণ কাজও তাদের কাছে একটু কঠিন। আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্কদের কোন কিছুর উপর মনোনিবেশ করা এবং কোন কাজ আগে করতে হবে সেটা বুঝতে সমস্যা হয়। তাদের সময় জ্ঞান কমে যায় এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ বা মিটিং এর কথা ভুলে যায়। তারা মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম, তাই লাইনে অপেক্ষা করা বা কোন ব্যাক্তির সাথে দ্বিমত থেকে অধৈর্য হয়ে ক্রোধের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।

প্রাপ্তবয়স্কদের ADHD এর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ

  • আবেগপ্রবণতা
  • কাজের প্রায়োরিটি নির্ধারণে সমস্যা
  • টাইম ম্যানেজমেন্টে ঘাটতি
  • কোন কাজের দিকে মনোনিবেশ করতে সমস্যা হওয়া
  • একসাথে দুইটি কাজ করতে সমস্যা
  • খুব বেশি সক্রিয়তা বা অস্থিরতা
  • দুর্বল পরিকল্পনা করার ক্ষমতা
  • কম সহনশীলতা বা অল্পতেই অধৈর্য হয়ে যাওয়া
  • ঘন ঘন মুড পরিবর্তন
  • রাগী মনোভাব
  • মানসিক চাপ সামলানোর ক্ষমতা কম

সাধারণ আচরণ এবং ADHD এর মধ্যে পার্থক্য কী?

প্রায় প্রত্যেকের জীবনেরই কোনও না কোনও সময় আচরণে ADHD এর লক্ষণ প্রকাশ পায়। বিশেষ পরিস্থিতি, রোগে ভোগা বা বেশি মানসিক চাপে মানুষের মধ্যে মনোযোগে ঘাটতি দেখা যায়। যদি এ ধরনের কোন লক্ষণ সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায় তবে সম্ভবত তা ADHD নয়। তখনই এটি ADHD বলে বিবেচিত হবে যখন উপসর্গগুলো অনেকদিন যাবত একইভাবে ঘটতে থাকবে এবং দৈনন্দিন জীবনে এর একটা প্রভাব পড়বে।

কখন ডাক্তার দেখাতে হবে?

উপরে উল্লেখিত কোনও উপসর্গ যদি ক্রমাগত কারো জীবনকে ব্যাহত করে তোলে তবে তার ADHD থাকতে পারে কিনা তা নিশ্চিত হতে কোন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা রোগীর সাথে কথা বলে এবং পরীক্ষা করে ADHD এর উপস্থিতি শনাক্ত করতে পারবেন। তবে এমন কারো কাছ থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহন করুন যার পূর্বে এ ধরনের রোগী হ্যাণ্ডেল করার মতো প্রশিক্ষণ এবং অভিজ্ঞতা আছে।

কি কারনে হয়?

ADHD এর সঠিক কারণ এখনও পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি, তবে এ নিয়ে গবেষণা চলছে। যেসকল কারণে এটি ডেভলপ করতে পারে তার মধ্যে রয়েছেঃ

  • জেনেটিক্সঃ পরিবার থেকে একজন মানুষের মধ্যে ADHD চলে আসতে পারে, অন্তত গবেষণা তাই বলে।
  • পরিবেশঃ কিছু পরিবেশগত কারণও এটি হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে, যেমন রাসায়নিক দূষণের শিকার হলে।
  • শিশুদের বিকাশের সময় সমস্যাঃ দৈহিক ও মানসিক বিকাশের প্রধান সময়গুলোতে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে কোন ব্যাঘাত ঘটলে ADHD হবার ঝুঁকি থাকে।
  • শিশুর মা গর্ভাবস্থায় ধূমপান, অ্যালকোহল বা ড্রাগ ব্যবহারে অভ্যস্ত থাকলে শিশুর ADHD হতে পারে।
  • যে শিশু নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম নেয় তার হতে পারে

কি ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে?

বাহ্যিকভাবে ততো প্রকট না মনে হলেও ADHD এর প্রভাবে একজন মানুষের জীবন জটিল হয়ে পড়ে। সাধারণ কাজকর্ম তার কাছে কঠিন মনে হতে পারে।

ADHD আক্রান্ত অনেক প্রাপ্তবয়স্কদের হতাশা, বাইপোলার ডিসঅর্ডার বা বিভিন্ন আচরণের ব্যাধি দেখা যায়। যদিও এসব সমস্যাগুলি সরাসরি ADHD এর কারণে নয়, মূলত রোগীর মধ্যে অসফলতা ও হতাশা থেকে এগুলোর জন্ম নেয়।

ADHD আক্রান্ত মানুষের মধ্যে উদ্বেগজনিত সমস্যাগুলো লক্ষণীয়। সামাজিক জীবনে এর দ্বারা সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ এবং বিপত্তিগুলির কারণে উদ্বেগ আরও খারাপ পর্যায়ে চলে যায়।