বিঞ্জ-ইটিং ডিসঅর্ডার বা খাদক ব্যাধি

খাদ্য গ্রহন প্রতিটি জীবের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। কিন্তু সুস্থ থাকার জন্য তা হওয়া চাই পরিমিত। বিঞ্জ-ইটিং ডিসঅর্ডার বা খাদক ব্যাধি একটি গুরুতর খাদ্য গ্রহনজনিত ব্যাধি। যখন একজন মানুষ ঘন ঘন অস্বাভাবিক পরিমাণে খাবার গ্রহণ করেন এবং খাওয়া শুরু করলে সহজে আর থামতে চাননা, তখন সেটাকে বিঞ্জ-ইটিং ডিসঅর্ডার বা খাদক ব্যাধি বলা হয়।

অনুষ্ঠান, বিয়ে-পার্বণে সবাইই একটু বেশি খায়। কিন্তু কিছু লোকের জন্য এই অতিরিক্ত খাওয়া তার দৈনন্দিন রুটিনের অংশ এবং এর উপর তার কোন নিয়ন্ত্রণ থাকেনা।  বিঞ্জ-ইটিং ডিসঅর্ডারে ভোগা ব্যাক্তি প্রায়ই তার অতিভোজন নিয়ে বিব্রত বোধ করেন এবং খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রতিবারই খাওয়ার সময় নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না।

 

আক্রান্ত কিনা কিভাবে বুঝবেন?

বিঞ্জ-ইটিং ডিসঅর্ডার বা খাদক ব্যাধিতে আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষের ওজন বেশি। তবে অনেকসময় স্বাভাবিক ওজনেও এটা থাকতে পারে। বিঞ্জ-ইটিং ডিসঅর্ডারের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছেঃ

  • নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অস্বাভাবিক পরিমাণে খাবার খাওয়া, যেমন দুই ঘন্টার বেশি সময়ের মধ্যে
  • খাওয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে বলে অনুভব করা
  • ক্ষুধার্ত না থাকার পরও খাওয়ার অভ্যাস
  • দ্রুত খাওয়া
  • পেট ভরার পরও খাওয়া চালিয়ে যাওয়া
  • প্রায়ই একা বা গোপনে খাওয়ার অভ্যাস
  • খাদক অভ্যাস নিয়ে কেউ কথা বললে বিরক্ত, হতাশ, লজ্জিত, দোষী বা বিচলিত হওয়া
  • খাওয়ার পরিমাণ বেশি হলেও ব্যায়াম করে অতিরিক্ত ক্যালোরি খরচে অনীহা

বিঞ্জ-ইটিং ডিসঅর্ডারের তীব্রতা নির্ধারণ করা হয় এক সপ্তাহে কতবার বিঞ্জিংয়ের বা খাওয়া থামাতে না পারার ঘটনা ঘটে তার উপর।

কখন চিকিৎসা প্রয়োজন?

যদি কারো বিঞ্জ-ইটিং ডিসঅর্ডারের কোনও উপসর্গ থাকে তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা সহায়তা নেয়া উচিত। বিঞ্জ-ইটিং ব্যাধির তীব্রতা সময় সাপেক্ষে কমতে পারে বা বাড়তে পারে, তবে চিকিৎসা না করা হলে তা বছরের পর বছর ধরে চলতে পারে।

 

ডাক্তার বা মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে বিঞ্জ-ইটিং উপসর্গগুলি ও খাওয়ার ব্যাপারে মানসিক অনুভূতিগুলো খুলে বলতে হবে। বিঞ্জ-ইটিং ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিরা তাদের এই খাদক আচরণ লুকানোর ক্ষেত্রে বেশ পটু, যার ফলে অনেকসময় অন্যদের পক্ষে সমস্যাটি সনাক্ত করা কঠিন। আপনার পরিচিত কারো বিঞ্জ-ইটিং ডিসঅর্ডারের লক্ষণ দেখে থাকলে তার সাথে খোলামেলা আলোচনা করুন। তার অনীহা থাকলেও তাকে দ্রুত কোন ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে উৎসাহিত করুন এবং তাকে সাহায্য করুন।

খাদক ব্যাধির কারণ কি?

বিঞ্জ-ইটিং ডিসঅর্ডারের নির্দিষ্ট কারণগুলো জানা যায়নি।  কিন্তু জেনেটিক্স, জৈবিক কারণ, দীর্ঘমেয়াদী ডায়েটিং এবং কিছু মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা এটি হবার ঝুঁকি বাড়ায়।

কাদের ঝুঁকি বেশি?

পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে বিঞ্জ-ইটিং ডিসঅর্ডার বেশি দেখা যায়। যদিও যেকোনো বয়সের মানুষের বিঞ্জ-ইটিং ডিসঅর্ডার থাকতে পারে, তবে এটি কৈশোরের শেষ দিকে বা ২০ এর শুরুতে বেশি দেখা দেয়।

যে কারণগুলি কারো বিঞ্জ-ইটিং ডিসঅর্ডার হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে তার মধ্যে রয়েছেঃ

  • পারিবারিক ইতিহাসঃ কারো বাবা-মা বা ভাইবোনদের খাদক ব্যাধি থাকলে তারও খাদক ব্যাধি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। জিনগত কারণে এটি বংশধরদের মধ্যে চলে আসতে পারে।
  • ডায়েটঃ বিঞ্জ-ইটিং ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত অনেকেরই ডায়েটিংয়ের ইতিহাস রয়েছে। দিনের বেলায় ক্যালোরি ডায়েট করা পরবর্তীতে অতিরিক্ত খাওয়ার তাগিদকে ট্রিগার করতে পারে।
  • মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাঃ অনেক মানুষের জন্য এই ব্যাধি মানসিক কারণে হয়ে থাকে। খাওয়া নিয়ে প্রতিযোগিতা, বেশি খাওয়ার ইচ্ছা ও বিশেষ খাবার অতি পছন্দনীয় করে তোলা ইত্যাদি বিঞ্জ-ইটিং ডিসঅর্ডার হবার ঝুঁকি বাড়ায়।

ব্যাক্তিজীবনে খাদক ব্যাধি কি কি সমস্যা তৈরি করে?

বিঞ্জ-ইটিং ডিসঅর্ডারের কারণে অনেকের জীবন জটিল হয়ে ওঠে। সামাজিক ও শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার উদ্রেক ঘটায়।

  • জীবনযাত্রা নিম্নমানের হয়ে ওঠ
  • কর্মক্ষেত্রে, ব্যক্তিগত বা সামাজিক জীবনে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়।
  • সামাজিক বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হতে পারে
  • শারীরিক স্থূলতা
  • স্থূলতার জন্য বিভিন্ন সমস্যা, যেমনঃ হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, গ্যাস্ট্রোইসোফেগাল রিফ্লাক্স ডিজিজ(জিইআরডি), ঘুম ও শ্বাস-প্রশ্বাসের বিভিন্ন ব্যাধি সৃষ্টি হবার ঝুঁকি তৈরি হয়।

বিঞ্জ-ইটিং ডিসঅর্ডারের সাথে বিভিন্ন মানসিক সমস্যা যুক্ত থাকে, তাদের মধ্যে রয়েছেঃ

  • বিষণ্ণতা
  • বাইপোলার ডিসঅর্ডার
  • উদ্বেগ
  • নেশাদ্রব্য গ্রহনের তাগিদ

 প্রতিরোধের কোন উপায় আছে কি?

বিঞ্জ-ইটিং ডিসঅর্ডার বা খাদক ব্যাধি প্রতিরোধের কোনো নিশ্চিত উপায় নেই। যদি কারো বিঞ্জ ইটিং এর লক্ষণ থাকে তবে চিকিৎসা সহায়তা নেয়া উচিত। কোনও বন্ধু, প্রিয়জন বা সন্তানের বিঞ্জ-ইটিং সমস্যা রয়েছে মনে হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই তাকে স্বাস্থ্যকর আচরণ এবং পেশাদার চিকিত্সার দিকে পরিচালিত করা দরকার।