বিড়ালের কামড় কি ক্ষতিকর ? কামড়ালে কি করবেন ?

আমাদের দেশে বিড়াল খুবই পরিচিত পোষা প্রাণী। গ্রামে, এমনকি শহরেও শখের বশে অনেকেই বিড়াল পোষেন। বিড়াল আদুরে প্রাণী হলেও যখন ভয় পায় সে আঁচড়ে অথবা কামড়ে দিতে পারে। অনেকের কাছে এসব বিষয় তেমন উদ্বেগের কিছু না হলেও বিড়ালের কামড় বা আঁচড় থেকে মারাত্মক ইনফেকশন তৈরি হতে পারে। বিড়ালের মুখে অনেক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে যা বিপজ্জনক রোগের কারণ হতে পারে। বিড়ালের কামড় কি ক্ষতিকর এবং কামড়ালে কি করবেন সেটা নিয়েই এই আলোচনা।

বিড়াল যেসকল রোগ ছড়াতে সক্ষম

বিড়ালের মুখের ভেতরে প্রচুর ব্যাকটেরিয়ার বসবাস, যাদের অনেকেই বিপজ্জনক। বিড়ালের দাঁত খুবই ধারালো এবং তীক্ষ্ণ বিধায় এরা যখন কাউকে কামড় দেয় তখন তা জীবাণুকে শরীরের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়। আমাদের ত্বকের অভ্যন্তরীণ স্তর ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির জন্য অনুকূল। ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া হলে তা শরীরে ছড়িয়ে গিয়ে রোগ সৃষ্টি করে।

কামড় থেকে জীবাণুর সংক্রমণ হয়েছে কিনা কিভাবে বুঝবেন?

অনেক সময় অনেকে বিড়ালকে বিপজ্জনক রোগসমুহের টিকা দিয়ে রাখেন। এতে মারাত্মক কোন রোগে আক্রান্তের আশঙ্কা কমে যায়। কিন্তু টিকা ছাড়া বিড়ালের কামড়কে অবহেলা করার সুযোগ নেই। বিড়াল কামড়ে কিনবা আঁচড়ে দিলে ক্ষতস্থানে কোন জীবাণুর সংক্রমণ হলে সেখানে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়।

  • ক্ষতস্থান বিবর্ণ হয়ে যাওয়া
  • ক্ষতস্থান ফুলে ওঠা
  • প্রদাহ হওয়া
  • ক্ষতস্থানের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া
  • জ্বর হওয়া
  • আক্রান্ত অঙ্গের পেশী দুর্বল অনুভূত হওয়া

এইসব উপসর্গগুলি দেখা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

কামড়ের কতদিন পর সংক্রমণ শুরু হয়?

বিড়ালের কামড় থেকে ঘন্টার মধ্যেই সংক্রমণ শুরু হতে পারে, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে সংক্রমণের জন্য একটু বেশি সময় এমনকি ১০ দিন বা তার বেশীও লাগতে পারে।

বিড়ালের কামড় পরবর্তী চিকিৎসা

বিড়াল কামড় বা আঁচড়ে দিলে ত্বকের উপরিভাগে যদি ক্ষত তৈরি না হয় অথবা রক্তপাত না হয়, সেক্ষেত্রে দুশ্চিন্তার বেশি কারণ নেই। সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র পরিষ্কার পানি ও সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। কিন্তু যদি ক্ষত গভীর হয় অথবা রক্তপাত হয় তখন সাথে সাথে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

এই ক্ষেত্রে প্রথমে ক্ষতস্থানকে সম্পূর্ণভাবে সাবান ও পানি দ্বারা ধুয়ে ফেলতে হবে। এরপর সেখানে অ্যান্টিবায়োটিক মলম প্রয়োগ করে আক্রান্ত স্থানটিকে ব্যান্ডেজ করে ফেলতে হবে। সংক্রমণের ধরন নির্ণয় করতে হলে হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহ করানো যেতে পারে।

কিছু কামড়ের ক্ষেত্রে ইন্ট্রাভেনাস (IV) অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হতে পারে। অন্যথায় সাধারন ওষুধ দিয়ে চিকিত্সা করা যেতে পারে।

টিটেনাস বুস্টার

গত ৫ বছরে যদি আপনার টিটেনাস ভ্যাকসিন না নেয়া থাকে, তাহলে একজন ডাক্তার আপনাকে টিটেনাস ভ্যাকসিন বুস্টার দিতে পারেন।

অস্ত্রোপচার বা সেলাই

ডাক্তার সিদ্ধান্ত নেবেন ক্ষতস্থানটি সঠিকভাবে সেরে ওঠার জন্য সেলাই বা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন কিনা।

রোগের সংক্রমণ ছাড়াও বিড়ালের কামরে যেসব ইনজুরি হতে পারে

টেন্ডন ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া

আমাদের হাতের টেন্ডন এবং লিগামেন্টগুলি নাজুক ধরনের। যদি বিড়াল জোরেশোরে কামড়ে দেয় তাহলে এই টেন্ডন ছিঁড়ে বা ফেটে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ে।

স্নায়ুতে আঘাত

বিরল ক্ষেত্রে বিড়ালের কামড় স্নায়ুতে ইনজুরি হতে পারে। এর উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে ব্যথার সাথে সাথে অস্থিরতা, দুর্বলতা ও প্যারাস্থেশিয়া।

দাগ

ক্ষতস্থান দ্রুত সেরে উঠলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গভীর কামড়ের একটি স্থায়ী দাগ থেকে যেতে পারে।

বিড়ালটির যদি পূর্বে রাবিসের টিকা না দেওয়া থাকে সেক্ষেত্রে ডাক্তার সিধান্ত নিবেন আপনার পোস্টএক্সপোজার প্রোফিল্যাক্সিস (পিইপি) নামের চিকিৎসার প্রয়োজন আছে কিনা।

যদি বিড়ালটি রাবিসের লক্ষণ না দেখায় তবে পিইপির সাধারণত প্রয়োজন হয় না। এটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিড়ালটিকে অন্তত ১০ দিন পর্যবেক্ষণ করা উচিত।

 

কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন

  • পূর্বলিখিত সংক্রমণের উপসর্গ গুলি প্রকাশ পেলে, যেমন জ্বর, সর্দি, পুস বা ক্ষত থেকে তরল বের হলে
  • ক্ষতস্থানের রক্তপাত বন্ধ না হলে
  • ক্ষত গভীর বা বড় মনে হলে
  • যে বিড়ালটি কামড়েছে সেটিকে আক্রমণাত্মক মনে হলে বা অদ্ভুত আচরণ করলে
  • গত পাঁচ বছরে টিটেনাস টিকা না নেয়া হলে
  • বিড়ালটি পোষা না হলে

পরিশেষে বলা যায়, বিড়ালের কামড় মোটেই হেলাফেলার বিষয় নয়। তাই অপরিচিত বিড়াল ধরা বা তাকে নিয়ে খেলা করা অথবা ভয় না দেখানোই উত্তম। বিড়াল পুষলেও তাকে কিভাবে সামলাবেন সেটি জেনে রাখতে হবে।