হাইপারহাইড্রোসিস বা অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা

অনেকেই আছি যাদের অতিমাত্রায় ঘামতে দেখা যায়। দেখা যায় মনোরম পরিবেশ, কোথাও চুপচাপ বসে আছি, অথচ প্রচুর ঘাম শুরু হয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় হাইপারহাইড্রোসিস। শারীরিক পরিশ্রম করলে বা তাপমাত্রা বেশি থাকলে সব মানুষেরই কম বেশি ঘাম হয় যা স্বাভাবিক। কিন্তু হাইপারহাইড্রোসিসের ক্ষেত্রে এই অস্বাভাবিক ঘাম শারীরিক পরিশ্রম বা তাপমাত্রার সাথে সম্পর্কিত নয়। উল্লেখযোগ্য কারণ ছাড়াই একজন ব্যাক্তি এতটাই ঘামতে পারেন যে তার জামাকাপড় সব ভিজে যেতে পারে, এমনকি হাত ও থুতনি থেকে ঘাম চুইয়ে পড়তে পারে। হাইপারহাইড্রোসিস বা অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপ ব্যাহত করার পাশাপাশি এই অস্বাভাবিক ঘাম সামাজিক উদ্বেগ এবং অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

 

কিভাবে বুঝবেন হাইপারহাইড্রোসিস কিনা?

বেশিরভাগ মানুষ যখন ভারি পরিশ্রম বা ব্যায়াম করেন, গরম পরিবেশে থাকেন অথবা মানসিক চাপ ও উদ্বিগ্নতায় ভুগেন তখন তার ঘাম শুরু হয়। হাইপারহাইড্রোসিসের ফলে সৃষ্ট ঘাম স্বাভাবিক ঘামের চেয়ে অনেক বেশি।

হাইপারহাইড্রোসিসের ক্ষেত্রে সাধারণত হাত, পা, বগল বা মুখেও প্রচুর ঘাম হয়। সপ্তাহে অন্তত একবার প্রচুর ঘাম হয়। এই ঘাম শরীরের উভয় পাশেই ঘটে।

কখন ডাক্তার দেখাতে হবে?

অনেকসময় অতিরিক্ত ঘাম একটি গুরুতর শারীরিক অবস্থার লক্ষণ। ভারী ঘামের সাথে মাথা, বুকে ব্যথা বা বমি বমি ভাব থাকলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা নিন।

ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন তখন, যখন-

  • ঘাম আপনার দৈনন্দিন জীবনযাপন ব্যাহত করে
  • ঘামের ফলে মানসিক কষ্টে ভুগছেন বা সামাজিকভাবে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন
  • হঠাৎ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘামতে শুরু করেন
  • কোন বিশেষ কারণ ছাড়াই রাতে ঘাম অনুভব করেন

এসব ক্ষেত্রে আর দেরি না করে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।

হাইপারহাইড্রোসিসের কারণ

ঘাম হওয়া আমাদের শরীরকে শীতল করার একটি প্রক্রিয়া। আমাদের স্নায়ুতন্ত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে শরীরের তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে আমাদের ত্বকের নিচের ঘাম গ্রন্থিগুলিকে ট্রিগার করে। আমরা যখন উদ্বিগ্ন থাকি তখন আমাদের হাতের তালু ঘামতে দেখা যায়।

হাইপারহিড্রোসিসের সবচেয়ে বেশি পরিচিত যে ধরণটি দেখা যায় তাকে প্রাইমারি ফোকাল হাইপারহাইড্রোসিস বলা হয়। এই ক্ষেত্রে আমাদের ঘাম গ্রন্থিগুলোকে সংকেত দেওয়ার স্নায়ুগুলি অতিরিক্ত মাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং তা কোন কারণ ছাড়াই। মানসিক চাপ বা নার্ভাসনেসের সময় সমস্যাটি আরও প্রকট হয়ে যায়। তখন হাত ও পায়ের তালু এবং মুখমণ্ডলেও ঘাম শুরু হয়।

এই ধরণের হাইপারহাইড্রোসিসের প্রকৃত কোন কারণ জানা যায়নি। এ ক্ষেত্রে বংশানুক্রমিক একটা বিষয় থাকতে পারে বলে অনুমান করা হয়।

হাইপারহাইড্রোসিস যখন শরীরে থাকা অন্য কোন রোগ বা কন্ডিশনের জন্য হয় সেটাকে বলা হয় সেকেন্ডারি ফোকাল হাইপারহাইড্রোসিস। যেসব কারণে এটি হতে পারে তার মধ্যে অন্যতম-

  • ডায়াবেটিস
  • মেনোপজ হট ফ্ল্যাশ
  • থাইরয়েড সমস্যা
  • রক্তে কম শর্করা
  • কিছু ধরণের ক্যান্সার
  • হার্ট অ্যাটাক
  • স্নায়ুতন্ত্রের রোগ
  • কোন রোগের সংক্রমণ
  • কিছু ওষুধের বাবহারেও ভারী ঘাম হতে পারে

চিকিৎসা

কার্যকর চিকিৎসা গ্রহন করলে হাইপারহিড্রোসিস কমিয়ে আনা সম্ভব। একজন ডাক্তার সাধারনত অ্যান্টিপারস্পাইরান্ট দিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন। যদি অ্যান্টিপারস্পাইরান্ট দিয়ে কাজ না হয় তবে আপনাকে বিভিন্ন ওষুধ এবং থেরাপি গ্রহন করতে হবে। গুরুতর ক্ষেত্রে, ডাক্তার অপারেশনের মাধ্যমে ঘামগ্রন্থিগুলো অপসারণ বা অতিরিক্ত ঘাম উৎপাদনের জন্য দায়ী স্নায়ুর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরামর্শ দিতে পারেন।

পরিশেষে

দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় হাইপারহাইড্রোসিসের ফলে সৃষ্ট অতিরিক্ত ঘাম নেতিবাচক প্রভাব ডেকে আনে। যাদের ঘাম বেশি তাদের ত্বকের সংক্রমণ বেশি হয়।স্যাঁতস্যাঁতে হাত এবং ঘাম-ভেজানো পোশাক সামাজিক এবং মানসিকভাবে  বিব্রতকর হতে পারে। তাই অবহেলা না করে যতো দ্রুত সম্ভব কার্যকরী চিকিৎসা গ্রহন করে একে প্রতিরোধ করা প্রয়োজন।