অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডার বা মানিয়ে নিতে অসুবিধা

অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডার বা মানিয়ে নিতে অসুবিধা একধরনের মানসিক সমস্যা। মানসিক চাপের সাথে এর সম্পর্ক রয়েছে। ধরুন এমন কিছু একটা ঘটলো যা উদ্বেগের বিষয়, অথবা নতুন কোন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন – এসব ক্ষেত্রে কিছুটা মানসিক চাপ থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই চাপ যদি স্বাভাবিকতার চেয়ে বহুগুন বেশি অনুভূত হয় তবে আপনি কোন একটা অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডারে ভুগছেন। কর্মক্ষেত্র, শিক্ষাক্ষেত্র অথবা সামাজিক যোগাযোগে পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেয়ার এই অক্ষমতা বা অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডার ব্যাক্তি জীবনে অনেক প্রতিকূলতা সৃষ্টি করে।

কর্মক্ষেত্রে সমস্যা, স্কুলের পড়াশোনার চাপ, নিজের বা আপনজনের অসুস্থতা, পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্যের মৃত্যু বা জীবনের যেকোনো হঠাৎ পরিবর্তন ব্যক্তিজীবনে মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের মধ্যেই এসব পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেয়া শিখে যায়। এটা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। কিন্তু অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডারগুলোর ক্ষেত্রে এই পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে খাপ খাইয়ে নেয়া সম্ভব হয়না। বরং উল্টো হতাশা ও উদ্বিগ্নতা দিন দিন বাড়তে থাকে যা পরবর্তীতে অবসাদের মতো দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন মানসিক সমস্যার দিকে নিয়ে যায়।

অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডার এর লক্ষ্ণণ

লক্ষণ এবং উপসর্গ রোগের ধরন ও ব্যক্তিভেদে আলাদা হতে পারে। এর অন্যতম লক্ষন হল ছোটখাটো ঘটনায় মাত্রাতিরিক্ত মানসিক চাপ অনুভূত হওয়া।

অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডারগুলো আমাদের স্বাভাবিক চিন্তাশক্তি, জীবনযাত্রা, আচরণ, ও সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। এর অন্যান্য উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ

  • দুঃখ, আশাহীনতা বা উপভোগ্য বিষয়গুলোকেও উপভোগ না করা
  • ঘন ঘন কান্না
  • উদ্বিগ্নতা বা সহজেই নার্ভাস, বিচলিত বা চাপ অনুভব করা
  • ঘুমের সমস্যা
  • ক্ষুধামন্দা
  • যেকোনোকিছুতে মনোনিবেশ করতে অসুবিধা
  • অতিরিক্ত আবেগ
  • সামাজিক আচার, অনুষ্ঠান বা কর্মকাণ্ডে অনাগ্রহ
  • কর্মক্ষমতা হ্রাস পাওয়া
  • আত্মহত্যাজনিত চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাওয়া

কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত?

যেকোনো মানসিক চাপ অস্থায়ী। সময়ের সাথে সাথে আমরা চাপের সাথে মানিয়ে নিতে শিখে যাই। চাপ কমে গেলে বা যে ঘটনার জন্য চাপে থাকা তার অবসান হলে অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডারের লক্ষণগুলোও চলে যায়। তবে কখনও কখনও কিছু চাপ আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাড়ায়। আবার একটি চাপ থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে অন্য কোন ঘটনা নতুনভাবে চাপে ফেলে দেয়, ফলে চাপ নিয়ে সেই একই সমস্যা থেকে যায়।

যদি প্রতিদিনই এরকম চাপের সাথে লড়াই করতে হয় তাহলে উচিত একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে দেখা করা। তার সাথে কাউন্সেলিং আপনাকে চাপ মোকাবিলা করতে, আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এবং নিজের অবস্থা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে সহায়তা করবে।

অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডারের কারণ

অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডারগুলো আমাদের জীবনের ঘটে যাওয়া বিভিন্ন পরিবর্তন বা চাপদ্বারা সৃষ্টি হয়। জেনেটিক্স, বিভিন্ন চাপপূর্ণ অভিজ্ঞতা, মেজাজ ইত্যাদির সমন্বয় এতে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

  • বিবাহবিচ্ছেদ বা বৈবাহিক সমস্যা
  • কারো সাথে ব্যাক্তিগত দ্বন্দ্ব বা পারস্পরিক সমস্যা
  • পরিস্থিতির পরিবর্তন, যেমন- অবসর, নতুন বাচ্চা হওয়া
  • প্রতিকূল পরিস্থিতি, যেমন- চাকরি হারানো, প্রিয়জনকে হারানো বা আর্থিক সমস্যা
  • স্কুলে বা কর্মক্ষেত্রে সমস্যা
  • কারো দ্বারা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়া
  • যুদ্ধ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো প্রাণঘাতী অভিজ্ঞতা
  • শারীরিক অসুস্থতা
  • অপরাধপ্রবন এলাকায় বাস করা
  • একই সময়ে বেশ কয়েকটি কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া
  • কোন কারণে কারো কাছে জিম্মি বোধ হওয়া
  • শৈশবে বিভিন্ন চাপপূর্ণ অভিজ্ঞতা

এসব কারণগুলোর জন্য একজন ব্যাক্তি অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডারে ভুগতে পারেন।

দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব

উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডারের সমাধান না করলে এটি উদ্বেগ, হতাশার মতো বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি মানসিক রোগের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এর ফলে বিভিন্ন নেশাদ্রব্যে আসক্তির কারণ হতে পারে।

প্রতিরোধ

অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডার প্রতিরোধের কোন উল্লেখযোগ্য উপায় নেই। তবে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, চাপ মোকাবেলার দক্ষতা বিকাশ এবং শক্তিশালী মানসিকতার হতে শেখা আমাদের চাপের সময় সহায়তা করতে পারে।

নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে যে চাপ মানুষের জীবনের নিত্য সঙ্গী। এটি এমনিতেই চলে যাবে। চাপের সাথে সহবাস করেই জীবনকে উপভোগ করতে হবে। চাপপূর্ণ পরিস্থিতিতেও সামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে হবে। প্রিয়জনের কাছে সবকিছু শেয়ার করলে মন হালকা হতে পারে। বই পড়া, গেম খেলা বা কোথাও ঘুরতে যাওয়া কিছুটা হলেও চাপ কমায়।