চুলে উকুনের সংক্রমণ

চুলে উকুনের সংক্রমণ হয়নি কখনো এরকম মানুষ পাওয়া কঠিন। উকুন হচ্ছে একধরনের পরজীবী পোকা যা মানুষের চুলে বাসা বাঁধে এবং মাথার ত্বক থেকে রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে। শিশুদের মাথায় প্রায়ই উকুনের সংক্রমণ দেখা যায়। একজনের চুল থেকে সরাসরি আরেকজনের চুলে এরা বিস্তার ঘটায়।

অনেকের ধারণা অপরিচ্ছন্ন জীবন-অভ্যাস উকুনের বাসা বাঁধার কারন। কিন্তু এই ধারণা আসলে সঠিক নয়। সৌভাগ্যক্রমে মাথার উকুন কোন ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস সংক্রমিত কোন রোগ বহন করে না।

মাথার উকুনের চিকিৎসার জন্য বাজারে বিভিন্ন ওষুধ পাওয়া যায়। আপনার মাথাকে উকুন এবং তাদের ডিম মুক্ত করতে সাবধানে চিকিত্সা নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন।

এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান উকুন থেকে নিরাময় পেতে ব্যাবহার করা হয়, যদিও তাদের কার্যকারিতার কোন ক্লিনিক্যাল প্রমাণ নেই।

উকুনের সংক্রমণ কিভাবে বুঝবেন?

উকুনের সংক্রমণের সাধারণ মধ্যে থাকতে পারেঃ

  • উকুন সংক্রমণের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হল মাথায়, ঘাড় এবং কানে চুলকানি। উকুন যখন মাথায় কামড়াতে থাকে তখন অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া হিসেবে খুব চুলকায়।
  • মাথার খুলিতে উকুনের চলাচল অনুভূত হতে পারে। উকুন আলো এড়িয়ে চলে এবং খুব দ্রুত চুলের মধ্যে চলাচল করতে সক্ষম। এরা ছোট হলেও দেখা যায়, কিন্তু খালি হাতে ধরা কঠিন।
  • চুলের গোঁড়ায় উকুনের সাদা ডিম শনাক্ত করা যায়। যদিও ডিম ফুটে যে বাচ্চা বের হয় তা খালি চোখে দেখা সম্ভব না। তবে মাথা, ঘাড় এবং কাঁধে ক্ষত দেখা যেতে পারে যা উকুনের সংক্রমণ নির্দেশ করে।

কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন?

যদি মনে হয় আপনার অথবা আপনার সন্তানের মাথায় উকুনের সংক্রমণ ঘটেছে তবে নিজেরা চিকিৎসা শুরুর আগে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। অনেকে চিরুনি অথবা বিভিন্ন ঘরোয়া পদ্ধতিতে উকুন ধ্বংস করার চেষ্টা করেন। বাস্তবিক অর্থে এতে সংক্রমণ সাময়িক নিয়ন্ত্রণ হলেও, পুনরায় বংশবৃদ্ধি করে আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে। আবার অনেক সময় দেখা যায় খুশকি, মরা চুল, ময়লা, অন্য পোকা বা মাথার ত্বকে অন্য চর্মরোগের সংক্রমণকে উকুনের সংক্রমণ ভেবে ভুল করেন এবং ধারনার ভিত্তিতে বিভিন্ন ওষুধ ব্যাবহার করে ফেলেন। এজন্য আগে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেয়া উত্তম।

উকুন সংক্রমণের কারন

মনে প্রশ্ন হতে পারে, আপনার মাথায় উকুন এলো কোথা থেকে? আপনার হোক কিংবা আপনার সন্তানের, এই উকুন কোন না কোন ভাবে অন্য কারো মাথা থেকে এসেছে এটা নিশ্চিত। সরাসরি সংস্পর্শ অথবা বিভিন্ন ব্যাবহার্য জিনিস যেমন চিরুনি, তোয়ালে, বালিশ অথবা পাশাপাশি ঘুমালে এটি একজনের মাথা থেকে অপরের মাথায় চলে যেতে পারে। বয়স্ক উকুন রক্ত ছাড়া ২৪ ঘণ্টার বেশি বাঁচতে পারেনা। নতুন বংশধরদের জন্য এই সময় আরও কম, মাত্র কয়েক ঘণ্টা। স্ত্রী উকুনএকটি আঠালো পদার্থ উৎপাদন করে যা প্রতিটি ডিমকে চুলের গোড়ায় দৃঢ়ভাবে আটকে রাখে।

উকুনের জীবনচক্র

একটি উকুন জীবনে তিনটি ধাপের মধ্য দিয়ে যায়। ডিম ফুটে ছয় থেকে নয় দিন পর বাচ্চা বের হয়। এই বাচ্চা বা লাভা নয় থেকে বারো দিন পর প্রাপ্তবয়স্ক উকুনে পরিনত হয়। প্রাপ্তবয়স্ক উকুন তিন থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত বাঁচতে পারে। একটি স্ত্রী উকুন দিনে ছয় থেকে দশটি ডিম পাড়ে।

কাদের উকুন সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি?

যেহেতু মাথার উকুন প্রাথমিকভাবে সরাসরি এক মাথা থেকে অন্য মাথায় ছড়ায়, সেহেতু তরুণদের মধ্যে ট্রান্সমিশনের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এছাড়া মায়ের সাথে ঘুমালে সেখান থেকে শিশুর অথবা উল্টোটাও ঘটতে পারে।

প্রতিরোধ

উকুনের সংক্রমণ মারাত্মক না হলেও জটিল সমস্যা। মাথায় উকুন থাকা খুবই অস্বস্তিকর। চুলকানির ফলে সেখানে ঘা সৃষ্টি হতে পারে। চুল ভেঙ্গে যাওয়া অথবা চুলের মান খারাপ হয়ে যেতে পারে। উকুন রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে। তাই শিশুদের মাথায় বেশি উকুন থাকলে তা শরীরের পুষ্টিতে ভাগ বসায়।

শিশুদের মাথায় উকুনের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা কঠিন। কারন তারা অনেকের সাথে মেলামেশা করে, যা উকুনকে ছড়িয়ে দেয়।

তবুও পিতা-মাতাকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। সন্তানকে পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস করতে হবে। চিরুনি, টুপি, কাপড়, স্কার্ফ ইত্যাদি জিনিসপত্র