ডিহাইড্রেশন কি? এর কারন ও করনীয় কি?

ডিহাইড্রেশন এর বাংলা অর্থ পানিশূন্যতা। গরমকাল আসলেই আমরা ডিহাইড্রেশন কথাটি ঘন ঘন শুনতে পাই। আমাদের শরীরবৃত্তীয় কাজকর্ম স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্ত পানির প্রয়োজন হয়। যখন শরীর থেকে অনেক পানি বেরিয়ে যায়, এবং পানির ঘাটতি দেখা দেয় তখন ডিহাইড্রেশন দেখা দেয়। আপনার শরীর থেকে কি পরিমাণ পানি বের হয়ে গেছে এবং এর ঘাটতি কতখানি, তার উপর নির্ভর করে এটি হালকা, মাঝারি, নাকি বিপজ্জনক মাত্রার ডিহাইড্রেশন। আজ আমরা ডিহাইড্রেশন হলে এর কারণ ও করনীয় সম্পর্কে জানবো।

ডিহাইড্রেশনের কারণ

ঘাম, শ্বাস-প্রশ্বাস, প্রস্রাব ইত্যাদি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় প্রতিদিন আপনার শরীর থেকে পানি হারানো স্বাভাবিক। আমরা পিপাসায় পানি পান করি, এছাড়াও বিভিন্ন ফল, খাদ্য ও পানীয় দ্বারা সেই হারানো পানি প্রতিস্থাপিত হয়। কিন্তু কোন কারনে যদি শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায় এবং তার ঘাটতি পূরণ না করা হয় তখন শরীরে ডিহাইড্রেশন ঘটে।

যেসব কারনে আপনি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পানি হারাতে পারেন তা হল –

  • জ্বর – অনেকদিন জ্বরে ভোগার দরুন শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। একে তো উচ্চতাপমাত্রায় শরীর থেকে বেশি পানি বাষ্পীভূত হয়, তার উপর খাওয়া দাওয়া ও পানি পান কম হয়।
  • ডায়রিয়া – বাংলাদেশে ডিহাইড্রেশনজনিত যত সমস্যা নিয়ে রোগী মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে তার মধ্যে ডায়রিয়া প্রধান। তীব্র ডায়রিয়ায় কয়েকঘণ্টার মধ্যেই শরীরে ডিহাইড্রেশন দেখা যায়। ডায়রিয়ার কারনে যে পানিশূন্যতা দেখা দেয় তার মাত্রা থাকে ভয়াবহ।
  • বমি – অতিরিক্ত বমি হওয়ার দরুন পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
  • অতিরিক্ত ঘাম – সবাই কম বেশি ঘামেন যা স্বাভাবিক। হিট স্ট্রোক বা কোন বিশেষ পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত ঘাম শরীর থেকে অনেক পানি বের করে দিতে পারে এবং ডিহাইড্রেশন ঘটতে পারে।
  • প্রস্রাব বেশি হওয়া – ডায়াবেটিস রোগীদের কিছু ওষুধ যেমন ডায়রেটিক্স গ্রহনের ফলে আপনার প্রস্রাব বেড়ে যেতে পারে। এভাবে আপনি শরীর থেকে যে পরিমাণ পানি হারিয়েছেন তা প্রতিস্থাপন নাও হতে পারে।

এছাড়াও পিপাসা কম অনুভূত হওয়া, পর্যাপ্ত পানি পান করতে অনীহা অথবা প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোক ইত্যাদি কারনেও শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে।

হালকা বা মাঝারি মাত্রার ডিহাইড্রেশনের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছেঃ

  • প্রচণ্ড তৃষ্ণা
  • শুকনো বা আঠালো মুখ
  • খুব কম প্রস্রাব হওয়া
  • গাঢ় হলুদ বর্ণের প্রস্রাব
  • শুষ্ক, শীতল ত্বক
  • মাথাব্যথা
  • মাংসপেশী ক্র্যাম্প বা খিচুনি হওয়া

তীব্র ডিহাইড্রেশনের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছেঃ

  • প্রস্রাব না হওয়া বা খুব গাঢ় হলুদ প্রস্রাব হওয়া
  • খুব শুষ্ক ত্বক
  • ঝিমুনি, মাথা ঘোরা অথবা কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলা
  • হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেড়ে যাওয়া
  • দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস নেয়া
  • চোখ ভেতরে ঢুকে যাওয়া
  • নিদ্রাহীনতা, শক্তির অভাব বোধ হওয়া, বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়া
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া

তবে শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উপসর্গ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।

শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণতঃ

  • মুখ ও জিহ্বা শুকিয়ে যাওয়া
  • কান্নার সময় চোখ থেকে পানি না বের হওয়া
  • তিন ঘন্টার মধ্যে ডায়াপার শুকনো থাকলে
  • চোখ বসে যাওয়া

বেশি মাত্রার ডিহাইড্রেশন একটি জরুরী ও বিপজ্জনক স্বাস্থ্য অবস্থা। এক্ষেত্রে অবিলম্বে চিকিত্সা গ্রহন করা প্রয়োজন।

ডিহাইড্রেশন যেসকল স্বাস্থ্যঝুকির কারন হতে পারেঃ

  • রক্তস্বল্পতাঃ ডিহাইড্রেশনের ফলে শরীরে স্বাভাবিক রক্তের পরিমানের স্বল্পতা দেখা দিতে পারে।
  • শরীরে অক্সিজেন স্বল্পতাঃ রক্তচাপ কমে যাওয়ার ফলে শরীরের টিস্যু পর্যায়ে কম অক্সিজেন সরবরাহ হতে শুরু করে। ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ কারজকারিতা হারানোর ঝুঁকিতে পড়ে যায়। এটা শরীরের জন্য বিপজ্জনক একটা অবস্থা।
  • খিঁচুনিঃ শরীরে খনিজ লবনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারনে খিঁচুনি দেখা দিতে পারে।
  • কিডনিতে সমস্যাঃ বেশি মাত্রার ডিহাইড্রেশন কিডনি অকার্যকারিতার কারন হতে পারে।
  • হিট স্ট্রোক হতে পারে।

 

চিকিৎসা

  • ডিহাইড্রেশন চিকিৎসার প্রথম ও প্রধান শর্ত হল শরীরে পানির স্বাভাবিক মাত্রা ফিরিয়ে দেয়া। এজন্য রোগীকে পানি, আইসপপ ইত্যাদি পান করাতে হবে।
  • ইলেক্ট্রোলাইট বা খনিজ লবনের মাত্রা স্বাভাবিক করতে স্যালাইন, স্পোর্টস ড্রিঙ্ক পান করানো যেতে পারে।
  • রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে শিরায় স্যালাইন পুশ করানো লাগতে পারে।
  • একজন চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক প্রয়োজনীয় ওষুধ-পথ্য গ্রহন করতে হবে।