বাচ্চাদের হাতে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট! সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য দায়ী কে?

আপনার সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য দায়ী কে?

সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য দায়ী কে

সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য দায়ী কে

Kid’s Mental Health স্মার্টফোন, ট্যাবলেট কম বয়সী সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে। শুধু মাএ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাই না, শারীরিক সমস্যা যেমন, চোখ দিয়ে পানি পড়া, অল্প বয়সে চোখে কম দেখা, মাথা ব্যথা, ঘাড় ব্যথা, এমনকি মেরুদন্ড ব্যথা পর্যন্ত হতে পারে।    

আপনি জেনে অবাক হবেন, ডিজিটাল (smartphone, tablet) স্ক্রিনে মাত্র এক ঘন্টা সময় ব্যয় করলে বাচ্চারা উদ্বিগ্ন ও বিষন্ন হতে পারে।

অনেক বাবা-মা তার সন্তানকে ব্যস্ত রাখতে হাতে একটি মোবাইল বা ট্যাবলেট ধরিয়ে দেয়। সন্তানও মজা করে কার্টুন দেখে বা ভিডিও গেমস খেলতে থাকে। আবার অনেক বাচ্চা তো মোবাইল হাতে না দিলে খেতেই চায় না!

দিন শেষে ক্ষতি কার হচ্ছে জানেন?

সেই সন্তানের, যে ঘন্টার পর ঘন্টা ডিজিটাল স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকে। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার পাশাপাশি শারীরিক সমস্যাও তাকে ঘিরে রাখে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন- যখন একটি বাচ্চার মস্তিস্ক গঠনের সেরা সময় চলে তখন সে যদি স্মার্টফোন, ট্যাবলেট আসক্তির মধ্যে ভুগে তাহলে তার মানসিক স্বাস্থ্যে বিশাল ক্ষতি হতে পারে।

প্রায় ৯০ হাজার মার্কিন শিশুর বাবা-মায়ের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় যে, ২০১৮ সালে ১৬-১৮ বছর বয়সীদের মাত্র ৪ শতাংশ প্রতিদিন বই পড়েন বিনোদনের জন্য, যেটা ১৯৭৫ সালের দিকে ছিলো ৬০ শতাংশ।

আর ১৩-১৬ বছর বয়সীদের মাত্র ১ শতাংশ দৈনিক খবরের কাগজ পড়ে। যেটা ১৯৯২ সালে ছিলো ৩৫ শতাংশ।

আসুন জানার চেষ্টা করি বাচ্চাদের হাতে স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট ইত্যাদি দেওয়ার ফলে কি কি ক্ষতি পারে। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার পাশাপাশি শারীরিক সমস্যাও খুঁজে বের করি।

১। আচরনে প্রভাব।

আপনি জেনে অবাক হবেন, একটি স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট প্রতি ১ ঘণ্টার মধ্যে গড়ে ১৫ মিনিট বাচ্চাদের দখলে থাকে।

যখন বাচ্চারা স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট তাদের বাবা-মার কাছে চায়, এবং সাথে সাথে তারা পায় না, তখন তারা অপেক্ষা করে। ফলে তাদের স্বাভাবিক ঘুম চক্রের ব্যাঘাত ঘটে। ফলে আচরনে এর প্রভাব পড়ে।

২। মস্তিষ্ক বিকাশে বাধাদান

গ্যাজেটের প্রতি আসক্তি অ্যালকোহল আসক্তির চেয়ে কোন অংশে কম না। মস্তিষ্কের যে অংশটি আবেগ, ভালবাসা, সহমর্মিতা ও সমবেদনার জন্য ভূমিকা রাখে সেগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয় অতিরিক্ত স্মার্টফোন-ট্যাবলেট চালানোর ফলে।

৩। খিটখিটে মেজাজ ও একঘেয়েমিতা।

বাচ্চারা যখন অতিরিক্ত পরিমানে ডিজটাল স্ক্রীনে আসক্তিতে থাকে তখন তারা তাদের মেজাজ ধরে রাখতে পারে না। ফলে রগচটা উত্তর, বাবা-মার কথা অবাধ্য, এমনকি অনেক বাচ্চারা গালাগালি করতে শুরু করে।

৪। বাস্তবতা সম্পর্কে আগ্রহ কমে যায়।  

বাচ্চারা যখন অতিরিক্ত মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে যায় তখন তারা নিজেদের কুয়োর ব্যাঙ মনে করে। ফলে বাস্তবতা সম্পর্কে তাদের কোম আগ্রহ থাকে না। বাস্তব ও ডিজিটাল জগতের মধ্যে তারা কোন পার্থক্য করতে পারে না।

৫। আবেগ কম কাজ করে।

ভার্চুয়াল জগতে (Facebook, Instagram, Snapchat) চ্যাট করা আর সরাসরি কারো সাথে কথা বলা সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। যখন তারা কম মানুষের সাথে মিশে তখন স্বাভাবিক ভাবে তাদের আবেগ কমে যায়। এমনকি নিজের বাবা, মা, ভাই, বোনের প্রতিও আবেগ কমে যায়। এর ফলাফলা হয় ভয়াবহ।

৬। দেরিতে কথা বলতে শিখে।

যেসকল শিশুরা স্মার্ট ডিভাইসের প্রতি আসক্ত থাকে তারা দেরিতে কথা বলতে শিখে। এর কারন তারা সব সময় একটি স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে থাকে ফলে বাচ্চাদের কম কথা বলার সুযোগ ঘটে।

৭। সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়

কিভাবে সমাজে চলতে হয়, কার সাথে কিভাবে সুন্দর করে কথা বলে হয় এই সব জিনিস বাচ্চাদের মাথায় থাকে না। পড়ুন – শিশুর চোখ ভালো রাখতে যা করবেন 

এছাড়াও কম বয়সী বাচ্চাদের হাতে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট দিলে আর যে সব সমস্যা হতে পারেঃ

  • পড়াশুনার প্রতি মন উঠে যায়।
  • ভাল মন্দের পার্থক্য নির্ণয় করতে পারে না।
  • চোখ দিয়ে পানি পড়ে, চোখের পাওয়ার কমে যায়।
  • অল্প বয়সেই মাথা ব্যাথা হয়।
  • ঘাড়ে ব্যাথা শুরু হয়।
  • নড়াচড়া না করার ফলে ওজন বেড়ে যার।

তবে মোবাইল, ট্যাবলেটে সময় ব্যয় করা ও সুস্থতার দিক দিয়ে শিশুদের তুলনায় কিশোররা বেশি আক্রান্ত। এর কারন সোশ্যাল মিডিয়াতে কিশোররা বেশী সময় ব্যয় করে। আর শিশুরা বেশীর ভাগ কার্টুন ও ভিডিও গেমসে সময় ব্যয় করে।

তাই সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যকে বিবেচনায় নিয়ে প্রতিটি বাবা-মার উচিত হবে যথেষ্ট সময় দেওয়া। বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া। সন্তানের সাথে বন্ধুসুলভ আচরন করা।