ব্রণ কেন হয় ও এর চিকিৎসা কি?

ত্বকে ব্রন ওঠার অভিজ্ঞতার সাথে সবাই কমবেশি পরিচিত। কৈশোরে কিংবা প্রাপ্তবয়স্ক হয়েও এখনও ব্রন ওঠে এরকম মানুষের অভাব নেই। কিন্তু অনেকেই জানিনা ব্রণ কেন হয় ও এর চিকিৎসা কি?

ব্রণ ত্বকের ফলিকলের একধরনের রোগ। সাধারণত মুখমণ্ডল, গলা, পিঠ ও বুকে ব্রণ উঠে থাকে। তবে গালে ও নাকে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ব্রণের ফলে ছোট ছোট দানা, ফোঁড়া বা ফুসকুড়ি সৃষ্টি হয়। বেশীদিন স্থায়ী না হলেও কারো কারো ক্ষেত্রে সারাবছর ব্রণের সমস্যা ভোগ করতে হয়। ব্রণ মানসিক কষ্টের কারণ হতে পারে। এর ফলে ত্বকে দাগ সৃষ্টি হতে পারে। তাই যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করা যায় এ ধরনের সমস্যার ঝুঁকি তত কম হবে।

ব্রণ কেন হয়?

বয়ঃসন্ধিকালে টেস্টোস্টেরন আর প্রজেস্টেরন হরমোনের প্রভাবে ত্বকের সিবেসিয়াস গ্রন্থি থেকে অধিক হারে তেল নিঃসরণ শুরু হয়। কোনো কারনে সিবেসিয়াস গ্রন্থির নালির মুখ বন্ধ হয়ে গেলে সেবাম বা তেল নিঃসরণে বাঁধার সৃষ্টি হয়। তখন তা ভেতরে জমে ফুলে ওঠে, ফলে একসময় গ্রন্থিটা ফেটে যায় ও তেল আশেপাশের টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়ে। তখন ব্যাকটেরিয়া এই তেলকে ভেঙ্গে টিস্যুতে ফ্যাটি এসিড উৎপন্ন করে। এই ফ্যাটি এসিড ত্বকের অভ্যন্তরে প্রদাহ সৃষ্টি করে যা দানা আকারে দেখা যায়। এটিকেই আমরা ব্রণ হিসেবে চিনি।

লক্ষ্ণণ

ব্রণের সংক্রমণ হলে নিম্নলিখিত লক্ষনগুলো প্রকাশ পায়ঃ

  • ছোট লাল দানা আকারের ফুসকুড়ি
  • সাদা ছোট ফোঁড়া যা টিপলে পুঁজ বের হয়
  • ত্বকের নীচে বড়, শক্ত, বেদনাদায়ক পিণ্ড
  • পুঁজ ভর্তি পিণ্ড

বিভিন্ন ধরনের ব্রণ

  • ট্রপিকাল ব্রণ, যা অতিরিক্ত গরম ও বেশি আদ্রতাযুক্ত বাতাসের কারনে দেখা যায়
  • প্রিমেন্সট্রুয়াল ব্রণ যা মেয়েদের মাসিকের আগে মুখমণ্ডলে ওঠে
  • কসমেটিকা ব্রণ, যা কোন বিশেষ প্রসাধনী দীর্ঘদিন ব্যাবহারের ফলে দেখা যায়
  • স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবনের ফলে স্টেরয়েড একনি ব্রণ হয়
  • অধিক ক্ষারীয় পদার্থ যেমন সাবান ব্যাবহারের ফলে ডিটারজিনেকস ব্রণ হতে পারে

কখন ডাক্তার দেখানো উচিত?

নিজের মুখমণ্ডলের প্রতি যথেষ্ট যত্ন ও স্বাস্থ্যকর রুটিনে অভ্যস্ত থাকার পরও যদি দেখা যায় ব্রণের সংক্রমণ কমছে না, তখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। ডাক্তার তখন এর জন্য ওষুধ লিখে দিবেন। এক্ষেত্রে একজন চর্মরোগ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

অনেক মহিলাদের ক্ষেত্রে ব্রণ কয়েক দশক ধরে স্থায়ী হতে পারে। কিশোরী ও যুবতীদের মাসিকসংক্রান্ত ব্রণ এমনিতেই চলে যায়।

প্রাপ্তবয়স্ক বা বয়ঃবৃদ্ধদের ব্রণ দেখা দিলে তা অন্য কোন রোগের উপসর্গ হিসেবে প্রকাশ পেতে পারে। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

ব্রণ হলে যা করবেন, অথবা করতে মানা

  • প্রতিদিন কমপক্ষে একবার সাবান বা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন
  • কোনভাবেই হাত দ্বারা ব্রণ স্পর্শ করা যাবেনা
  • তৈলাক্ত কোন প্রসাধনী ব্যাবহার করা থেকে বিরত থাকুন
  • পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিন
  • মাথার ত্বক পরিষ্কার ও খুশকিমুক্ত রাখুন
  • ভিটামিন ও পুষ্টিকর খাবার খান
  • আচার ও চাটনি এড়িয়ে চলুন
  • তৈলাক্ত ক্রিম ও ফাউন্ডেশন ব্যাবহার করা নিষেধ
  • পনির, দুধ, দই, কোল্ডড্রিংকস কমিয়ে দিন
  • মানসিক চাপমুক্ত থাকুন
  • রোদ এড়িয়ে চলুন

ব্রণের চিকিৎসা

ব্রণের সংক্রমণ যদি খুব বেশি হয় তখন টেট্রাসাইক্লিন অথবা ইরাইথ্রোমাইসিন খাওয়া যায়, তবে তা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী। এছাড়াও রেটিন-এ ক্রিম অথবা পেনক্সিল ২.৫ জেলটি ব্যাবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।

বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান ব্যাবহার করেও ব্রণের চিকিৎসায় উপকার মেলে। প্রতিদিন বিশুদ্ধ মধু ব্যাবহার করে ব্রণের সংক্রমণ একদম নির্মূল করা যায় বলে প্রচলিত আছে। জলপাই তেল ম্যাসাজ করলে ব্রণ কমে। এছাড়া ত্রিফলা, গোলাপ জলের টোনার এগুলো দিয়েও ব্রণের চিকিৎসা করা হয়।

ব্রণ নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারণা

ব্রণ নিয়ে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে, যেমন-

  • অনেকের ধারণা স্ট্রেস বা মানসিক চাপ ব্রণ সৃষ্টি করে। কিন্তু এটা ভুল ধারণা। তবে ইতোমধ্যেই ব্রণ থেকে থাকলে, মানসিক চাপ একে আরও খারাপ করে তুলতে পারে।
  • চকোলেট এবং চিনিযুক্ত খাবারের সাথে ব্রণ ওঠার সম্পর্ক নেই।
  • নোংরা ত্বকের সাথে ব্রণ ওঠার সম্পর্ক নেই। তাই কারো ব্রণ উঠলে ভাবার অবকাশ নেই যে সে স্বাস্থ্যসচেতন না। আবার ময়লা দূর করতে গিয়ে বেশি ঘষা মাজা করলে ব্রণ বাড়তে পারে।
  • মেকাপ বা প্রসাধনী ব্যাবহারে ব্রণ বাড়েনা। তবে হ্যাঁ, তৈলাক্ত প্রসাধনী ব্যাবহার করা যাবেনা।