প্রতিদিনের যে ১০ টি অভ্যাস অল্প অল্প করে আমাদের শারীরিক ক্ষতি সাধন করে

যে ১০ টি অভ্যাস অল্প অল্প করে আমাদের শারীরিক ক্ষতি সাধন করে

শারীরিক ক্ষতি এড়াতে এই আর্টিকেল শেষ পর্যন্ত পড়ুন। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের সকলের বিভিন্ন রকমের অভ্যাস গড়ে উঠে। তার মধ্যে ধূমপান ও জাঙ্ক ফুড খাওয়ার মতো কিছু অভ্যাস রয়েছে।

যা আমাদের দেহের মারাত্নক ক্ষতি সাধন করে থাকে। নেতিবাচক কিছু অভ্যাস দেহের মারাত্নক ক্ষতি সাধন করলেও নিজের অজান্তেই আমাদের জীবনের প্রতিদিনের অংশ হয়ে দাড়িঁয়েছে।

এখানে আমরা সর্বাধিক প্রচলিত ১০ টি নেতিবাচক অভ্যাস সম্পর্কে আলোচনা করবো। নিচে তা বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো।  

১. পিছনের পকেটে ওয়ালেট রাখা

পিছনের পকেটে ওয়ালেট রাখা শারীরিক ক্ষতি কারন

পিছনের পকেটে ওয়ালেট রাখা শারীরিক ক্ষতি কারন

ওয়ালেট ব্যবহারকারী প্রায় সকলেই জানেন যে এটি রাখার সবচেয়ে সুবিধাজনক স্থান হলো প্যান্টের পিছনের পকেট। কিন্তু পিছনের পকেটে ওয়ালেট রাখা সুবিধাজনক হলেও স্বাস্থ্য উপযোগী নয়।

প্যান্টের পিছনের পকেটে ওয়ালেট সহ ১৫ মিনিট বসে থাকলে আপনার মেরুদন্ড ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই ভাবে দীর্ঘ সময় যাবত বসে থাকলে আপনার মেরুদন্ডের প্রান্তিকরণ ব্যাহত পারে।

তাছাড়া মেরুদন্ডে ব্যথা অনুভূত হওয়া সহ মেরুদন্ডের স্পাইনাল স্কার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

২. কোন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস সাথে নিয়ে বিছানায় শোয়া

ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস সাথে নিয়ে বিছানায় শোয়া

ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস সাথে নিয়ে বিছানায় শোয়া

 

এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ঘুমানোর পূর্বে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করলে ঘুমে মারাত্নক বিঘ্ন ঘটে এবং ঘুমের গুণগত মান নষ্ট হয়। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, আনুমানিক ৯০% প্রাপ্ত বয়স্ক ও ৭০% শিশু বিছানায় যাওয়ার পর ঘুমানোর পূর্বে বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করে।

ঘুমের পূর্বে নিয়মিত ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করলে ঘুমের ক্ষতি হয়, ওজন বৃদ্ধি পায় এবং দিনের বেলা ক্লান্তি অনুভূত হয়। পাশাপাশি এর ফলে আমরা উৎপাদনমুখী হতে পারি না, ধৈর্য্য কমে যায় এবং মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়।

ঘুমাতে যাওয়ার কমপক্ষে এক ঘন্টা আগে সকল ধরনের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করলে ঘুমের গুণগত মান বৃদ্ধি পায় এবং শারিরীক নানা জটিলতা থেকে মুক্ত থাকা যায়।

৩. গরম পানিতে হাত ধোয়া

বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায় যে, গরম ও ঠান্ডা পানি আমাদের হাতের বিভিন্ন জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সমান ভাবে কার্যকর। সাধারণত অতিরিক্ত গরম পানির চেয়ে ঠান্ডা পানি আমাদের হাতের জন্য অধিক স্বাস্থ্যকর।

ফুটন্ত গরম পানি চিকিৎসা যন্ত্র গুলো জীবাণু মুক্ত করতে অধিক কার্যকর। অপরদিকে ফুটন্ত গরম পানিতে হাত জীবাণু মুক্ত হওয়ার পরিবর্তে পুড়ে যেতে পারে।

তাই শারীরিক ক্ষতি এড়াতে গরম পানিতে হাত জীবাণু মুক্ত করার পরিবর্তে ঠান্ডা পানিতে জীবাণু মুক্ত করা অধিক নিরাপদ।

৪. প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে পান করা

প্লাস্টিকের বোতলে পানি পান করা নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর। তবে সকল পরিবেশে তা নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর নয়।

উচ্চ তাপমাত্রার সংস্পর্শে আসলে প্লাস্টিকের বোতল থেকে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়্। ফলে সে বোতলে পানি পান করা খুবই ঝুকিঁপূর্ণ। 

৫. দ্রুত খাবার গ্রহণ করা

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, দ্রুত খাবার খাওয়া ও চিবানোর ফলে অনেক ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা তৈরি হতে পারে। দ্রুত খাবার খাওয়ার ফলে চামড়া মোটা হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া এর ফলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুকিঁ বেড়ে যায়।

৬. খাওয়ার পর পর দাঁত ব্রাশ করা

খাদ্য খাওয়ার কমপক্ষে ৩০ মিনিট পর দাঁত ব্রাশ করা উচিত। কারণ আমাদের দাঁত এনামেল নামক পদার্থ দ্বারা সুরক্ষিত থাকে।

কিন্তু বিভিন্ন খাদ্য দ্বারা তৈরি এসিড দাঁতের প্রতিরক্ষামূলক এনামেলটি ছিন্ন করে দাঁতকে দুর্বল করে ফেলে। ফলে খাওয়ার পর পর দাঁত ব্রাশ করলে দাঁতের মারাত্নক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৭. অতিরিক্ত জুস পান করা

জুস একটি অতি সুস্বাদু পানীয়। অতি সুস্বাদু হওয়ায় আমরা অনেকেই অতিরিক্ত হারে জুস পান করে ফেলি। ফলের জুসে সাধারণত ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে।

তাই জুস পান করা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস হিসেবে বিবেচিত হলেও অতিরিক্ত জুস পান করলে অনেক সমস্যা তৈরি হতে পারে।

অতিরিক্ত হারে জুস পান করায় অভ্যস্ত হয়ে গেলে দাঁতের মাড়ি ক্ষয় হয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া এবং ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি বেড়ে যায়।

পড়ুন – ৩০ মিনিট হাঁটেন তবে এই ১০টি জিনিস আপনার দেহে ঘটবে

৮. বেশি লবণ খাওয়া

প্রয়োজন মতো লবণ ব্যবহারের ফলে আমাদের খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি পায়। তবে অতিরিক্ত লবণ স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও পাকস্থলী ক্যান্সার হতে পারে। তাছাড়া উচ্চ রক্তচাপের ফলে ধমনী, হৃৎপিন্ড ও কিডনী আক্রান্ত হতে পারে।

৯. অতিরিক্ত ঘুম

পরিমিত ঘুম দেহকে পুনরুদ্ধার ও সজীব করে তোলে। কিন্তু অতিরিক্ত ঘুম অনেক ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত অতিরিক্ত ঘুম মৃত্যূর ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

তাছাড়া এটি হতাশা, হৃদরোগ, ওজন বৃদ্ধি ও মস্তিষ্কে প্রতিবন্ধকতার মতো খারাপ পরিস্থিতিও তৈরি করতে পারে।

১০. দীর্ঘ সময় বসে থাকা

আমরা যখন অফিসে কাজ করি কিংবা পড়শোনা করি তখন অধিক সময় বসে থাকি। এর ফলে অনেক ধরনের শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে পারে।

নিয়মিত অধিক সময় বসে থাকলে কম বয়সে মৃত্যূর ঝুঁকি তৈরি হয়। পাশাপাশি ওজন বৃদ্ধি, কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ ও ডায়াবেটিস সহ নানা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে।